এখানে একটা জিনিস আছে যা কেউ আপনাকে কক্সবাজার সম্পর্কে বলে না: সবাই সেখানে যায়, কিন্তু বেশিরভাগ মানুষ এটা সম্পূর্ণ ভুলভাবে করে। তারা ভিড়ের মূল সৈকত এলাকায় থাকে, ট্যুরিস্ট দাম দেয়, ভিড়ের মধ্যে লড়াই করে, আর ভেবে চলে আসে "মেহ, ঠিক ছিল।"
আমি সাতবার কক্সবাজার গিয়েছি। প্রথমবার? আমি সব রুকি ভুল করেছিলাম। লাবনী বিচের কাছে অতিরিক্ত দামের হোটেলে থেকেছিলাম, বালিতে শান্ত জায়গা খুঁজে পাইনি, এমন খাবারের জন্য ৮০০ টাকা দিয়েছিলাম যার দাম ২০০ টাকা হওয়া উচিত ছিল। হতাশ হয়ে চলে এসেছিলাম।
তারপর আমি গোপন জিনিসগুলো শিখলাম। আসলে কোথায় থাকতে হবে। কোন সৈকতগুলো প্রাকৃতিক। কিভাবে ট্যুরিস্ট ফাঁদ এড়াতে হবে। কখন যেতে হবে। আসল খরচ কত। আর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ – বিশ্বের দীর্ঘতম প্রাকৃতিক সমুদ্র সৈকত যেভাবে অভিজ্ঞতা করা উচিত সেভাবে কিভাবে করতে হবে।
এটা আপনার সাধারণ "টপ ১০ জিনিস" লিস্টিকল না। এটা সবকিছু যা আমি চাই কেউ আমাকে আমার প্রথম ভিজিটের আগে বলে দিতো। আসল খরচ, আসল সুপারিশ, ট্রায়াল আর এররের মাধ্যমে এই জায়গা বুঝে নেওয়া একজনের থেকে আসল ইনসাইডার জ্ঞান।
কক্সবাজার বোঝা: শুধু একটা সৈকতের চেয়ে বেশি
কক্সবাজার একটা সৈকত না – এটা ১২০ কিলোমিটার অবিচ্ছিন্ন উপকূলরেখা। দৃষ্টিভঙ্গি দিতে: এটা ঢাকা থেকে টাঙ্গাইলের দূরত্বের চেয়ে লম্বা। বেশিরভাগ ট্যুরিস্ট ৫-কিলোমিটার অংশে জড়ো হয় আর ১১৫ কিলোমিটার সৌন্দর্য মিস করে।
সৈকতটি কয়েকটি অংশে বিভক্ত, প্রতিটির নিজস্ব চরিত্র আছে:
- লাবনী বিচ: মূল ট্যুরিস্ট হাব। ভিড়, বাণিজ্যিক, কিন্তু সুবিধাজনক। হোটেল, রেস্তোরাঁ, সবকিছু হাঁটার দূরত্বে।
- সুগন্ধা বিচ: একটু শান্ত, স্থানীয়দের কাছে জনপ্রিয়। সূর্যাস্ত দেখার জন্য ভালো।
- কলাতলী বিচ: মধ্যম স্থান। লাবনীর চেয়ে কম বিশৃঙ্খল, দক্ষিণের সৈকতগুলোর চেয়ে বেশি উন্নত।
- ইনানী বিচ: ৩৫ কিমি দক্ষিণে। চওড়া, পরিষ্কার, চমৎকার। এখানেই আপনার আসলে যাওয়া উচিত।
- হিমছড়ি: ২০ কিমি দক্ষিণে। সৈকত পাহাড়ের সাথে মিলেছে। কাছে ছোট জলপ্রপাত। অবমূল্যায়িত রত্ন।
প্রো ইনসাইট: যত দক্ষিণে যাবেন, তত ভালো হবে। ভিড় কমে যায়, সৈকত চওড়া হয়, পানি পরিষ্কার হয়, আর দাম কমে যায়।
যাওয়ার সেরা সময় (আর কখন একদম এড়িয়ে চলবেন)
পিক সিজন: নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি
এই সময় কক্সবাজার সবচেয়ে ভালো। পরিষ্কার আকাশ, শান্ত সমুদ্র, মনোরম তাপমাত্রা (২০-২৫°সে)। কিন্তু এখানে সমস্যা: সবাই এটা জানে। হোটেলগুলো তাদের স্বাভাবিক দামের ২-৩ গুণ চার্জ করে। সপ্তাহান্তে সৈকত ভরে যায়। আপনাকে অন্তত ২-৩ সপ্তাহ আগে আবাসন বুক করতে হবে।
প্রো টিপ: পিক সিজনে গেলে, সপ্তাহের দিনে যান (সোমবার-বৃহস্পতিবার)। দাম ৩০-৪০% কমে যায়, ভিড় সামলানো যায়, আর আপনি আসলে সৈকত উপভোগ করবেন।
শোল্ডার সিজন: মার্চ ও অক্টোবর
একটু গরম, কিন্তু এখনও ভালো। কম ট্যুরিস্ট, ভালো হোটেল ডিল। মার্চ গরম হতে পারে (৩০°সে+), কিন্তু আপনি যদি গরম সামলাতে পারেন, আপনি টাকা বাঁচাবেন আর ভিড় এড়াবেন। অক্টোবর বর্ষার পরে – সৈকত পরিষ্কার, আবহাওয়া উন্নত হচ্ছে, দাম যুক্তিসঙ্গত।
বর্ষা: এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বর – এড়িয়ে চলুন
বর্ষায় যাবেন না। সিরিয়াসলি। সমুদ্র রুক্ষ আর বিপজ্জনক। অনেক হোটেল বন্ধ থাকে। ক্রমাগত বৃষ্টি হয়। সৈকত কার্যক্রম সীমিত। যে কয়েকজন ট্যুরিস্ট আসে তারা সাধারণত হতাশ হয়।
ব্যতিক্রম: আপনি যদি নাটকীয় ঝড়ো সমুদ্র পছন্দ করেন আর বৃষ্টিতে আপত্তি না থাকে, সেপ্টেম্বর আগ্রহজনক হতে পারে। কিন্তু সাধারণ বিচ ভ্যাকেশনের জন্য? এড়িয়ে যান।
আসলে কোথায় থাকবেন: আসল সুপারিশ
এখানেই বেশিরভাগ মানুষ ভুল করে। তারা লাবনী বিচের কাছাকাছি থাকার উপর ভিত্তি করে বুক করে এটা না বুঝে যে আরো ভালো অপশন আছে।
বাজেট অপশন (প্রতি রাতে ৮০০-১৫০০ টাকা)
লোকেশন কৌশল: মূল সৈকত থেকে সামান্য দূরে থাকুন (১০-১৫ মিনিট হাঁটা)। একই মানের জন্য আপনি অর্ধেক দাম দেবেন।
আমি বেশ কয়েকটা বাজেট জায়গায় থেকেছি। মূল বিষয় হলো প্রত্যাশা পরিচালনা করা। আপনি একটা পরিষ্কার বিছানা, কাজ করা এসি (গ্রীষ্মে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ), আর গরম পানি পাবেন। ফ্যান্সি সুবিধা আশা করবেন না।
যেসব এলাকা খুঁজবেন: কলাতলী ভেতরের রাস্তা, সুগন্ধা পয়েন্টের কাছে। যাচাইকৃত বাজেট অপশনের জন্য আমাদের কক্সবাজার আবাসন তালিকা দেখুন।
মিড-রেঞ্জ (প্রতি রাতে ২৫০০-৫০০০ টাকা)
বেশিরভাগ ভ্রমণকারীদের জন্য সুইট স্পট। ভালো মান, ভালো অবস্থান, ব্যাংক ভাঙবে না। এখানেই আমি সাধারণত এখন থাকি।
এই হোটেলগুলো সাধারণত অফার করে: সমুদ্রমুখী রুম (অতিরিক্ত ৫০০-৮০০ টাকা মূল্যবান), হোটেলে রেস্তোরাঁ, রুম সার্ভিস, সাহায্যকারী স্টাফ যারা ইংরেজি বলে, ট্যুর বুকিং সহায়তা।
লোকেশন টিপ: কলাতলী এলাকা এই রেঞ্জে সেরা মূল্য দেয়। মূল আকর্ষণের যথেষ্ট কাছে, বিশৃঙ্খলা থেকে যথেষ্ট দূরে।
লাক্সারি (প্রতি রাতে ৮০০০-২৫০০০+ টাকা)
কক্সবাজারে বেশ কিছু আন্তর্জাতিক-মানের রিসোর্ট আছে। আপনি যদি খরচ করছেন, এগুলো সরবরাহ করে। প্রাইভেট বিচ অ্যাক্সেস, ইনফিনিটি পুল, স্পা সার্ভিস, ফাইন ডাইনিং, সব কিছু।
বড় নামগুলো: ওশান প্যারাডাইস, লং বিচ হোটেল, সায়েমান বিচ রিসোর্ট, রয়্যাল টিউলিপ। দামি, কিন্তু অভিজ্ঞতা সত্যিই ভালো।
ইনানী কৌশল (আমার ব্যক্তিগত সুপারিশ)
মূল কক্সবাজারে থাকার বদলে, ইনানীতে থাকুন। সিরিয়াসলি।
ইনানী ৩৫ কিমি দক্ষিণে। সৈকত অবিশ্বাস্য – চওড়া, পরিষ্কার, কম ভিড়। হোটেল সস্তা (একই মানের জন্য মূল কক্সবাজারের চেয়ে ৩০-৪০% কম)। পরিবেশ আরো শিথিল।
ডাউনসাইড: আপনি মূল শহরের রেস্তোরাঁ আর কেনাকাটা থেকে দূরে। কিন্তু সত্যি বলতে? এটা আসলে একটা প্লাস। আপনি সৈকতের জন্য এসেছেন, শপিং মলের জন্য না।
আসলে কি করবেন: সৈকতে শোয়ার বাইরে
১. ইনানী বিচ অভিজ্ঞতা
একদিনের ট্রিপ নিন (অথবা আরো ভালো, সেখানে থাকুন)। ভাটার সময়, সৈকত হাস্যকরভাবে চওড়া হয় – আমরা বলছি ২০০+ মিটার শক্ত বালি। আপনি ক্রিকেট, ফুটবল খেলতে পারবেন, ঘুড়ি উড়াতে পারবেন। উচ্চ জোয়ারে, সাঁতারের জন্য পারফেক্ট (মূল সৈকতের চেয়ে নিরাপদ)।
খরচ: কক্সবাজার মূল শহর থেকে ট্রান্সপোর্ট: সিএনজি দিয়ে একদিকে ৩৫০-৪০০ টাকা। অথবা দিনের জন্য গাড়ি ভাড়া করুন (২৫০০-৩০০০ টাকা, ৪-৫ জন ফিট হয়)
২. হিমছড়ি জলপ্রপাত ও সৈকত
মূল শহর থেকে ২০ কিমি দক্ষিণে। যেখানে পাহাড় সমুদ্রের সাথে মিলেছে। সমন্বয় সুন্দর।
জলপ্রপাত ছোট (নায়াগ্রা আশা করবেন না), কিন্তু এটা পুরো ভাইব নিয়ে। পাহাড়, সৈকত, জলপ্রপাত, আর বিশাল পাথর যেখানে ঢেউ ভাঙে। প্রবেশ: ২০ টাকা।
ট্রান্সপোর্ট: কক্সবাজার থেকে সিএনজি: একদিকে ২০০-২৫০ টাকা
৩. সূর্যোদয় দেখা
এটা ফ্রি আর দর্শনীয়। ভোর ৫:৩০ মিনিটে ঘুম থেকে উঠুন, সৈকতে হাঁটুন, বঙ্গোপসাগরের উপর সূর্য উঠতে দেখুন।
সূর্যোদয়ের সময় সৈকত একটা ভিন্ন জগত। খালি, শান্তিপূর্ণ, সুন্দর আলো। জেলেরা জাল টানছে। স্থানীয় সকালে হাঁটা মানুষ। এখনও ট্যুরিস্ট নেই।
সেরা স্পট: সুগন্ধা পয়েন্ট, লাবনী বিচ (হ্যাঁ, এমনকি ভিড়ের লাবনীও সূর্যোদয়ে জাদুকরী), ইনানী
৪. মেরিন ড্রাইভ রোড
কক্সবাজার থেকে টেকনাফ পর্যন্ত ৮০-কিলোমিটার রাস্তা, উপকূল বরাবর চলছে। ২০১৭ সালে খোলা, এটা দক্ষিণ এশিয়ার সেরা উপকূলীয় ড্রাইভের একটি হয়ে গেছে।
আপনি এটা করতে পারেন:
- ভাড়া গাড়ি: পুরো দিনের জন্য ৪৫০০-৬০০০ টাকা (ড্রাইভার, জ্বালানি অন্তর্ভুক্ত)। ৪-৫ জনের মধ্যে ভাগ = মাথাপিছু ৯০০-১২০০ টাকা।
- মোটরবাইক: দিনে ১৫০০-২০০০ টাকা (যদি আপনি চালাতে পারেন)। এটা অভিজ্ঞতার সবচেয়ে রোমাঞ্চকর উপায়।
থামার জায়গা: হিমছড়ি, ইনানী, বিভিন্ন ভিউপয়েন্ট।
খাবার গাইড: কি খাবেন আর কোথায়
নাস্তা
বেশিরভাগ হোটেল নাস্তা অন্তর্ভুক্ত করে। না হলে:
- হোটেল রেস্তোরাঁ: কন্টিনেন্টাল নাস্তা ২০০-৩৫০ টাকা, বাংলা নাস্তা ১৫০-২৫০ টাকা
- স্থানীয় চায়ের দোকান: পরোটা + ডাল ৬০-৮০ টাকা, চা ১০-১৫ টাকা। ফ্যান্সি না, কিন্তু পেট ভরে আর সস্তা।
দুপুরের খাবার
মধ্যদিনের গরম ভয়াবহ। বেশিরভাগ মানুষ হালকা খায়।
- হোটেল রুম সার্ভিস: সুবিধাজনক কিন্তু দামি (৩০০-৬০০ টাকা একবেলা খাবারের জন্য)
- স্থানীয় রেস্তোরাঁ: ভাত, তরকারি, সবজি ১২০-১৮০ টাকা। পেট ভরে, খাঁটি, সস্তা।
রাতের খাবার
এই সময় আপনি সামুদ্রিক খাবার খান। ভালো রেস্তোরাঁয় যান (সৈকতের পাশের স্টল না)।
বাজেট: স্থানীয় জায়গায় মাথাপিছু ২৫০-৪০০ টাকা। মিড-রেঞ্জ: ভালো রেস্তোরাঁয় ৬০০-১০০০ টাকা। ফ্যান্সি হোটেল ডাইনিং: মাথাপিছু ১৫০০-৩০০০ টাকা।
আমার সুপারিশ: হোটেল স্টাফের সুপারিশের মাধ্যমে একটা মিড-রেঞ্জ স্থানীয় রেস্তোরাঁ খুঁজুন। আপনি তাজা সামুদ্রিক খাবার সহ মাথাপিছু ৬০০-৮০০ টাকায় ভালো খাবেন।
সম্পূর্ণ খরচ বিভাজন: আপনি আসলে কত খরচ করবেন
চলুন ৩ দিন/২ রাতের ট্রিপের জন্য আসল হিসাব করি।
বাজেট ট্রিপ (মাথাপিছু)
| আইটেম | খরচ (টাকা) |
|---|---|
| ট্রান্সপোর্ট (ঢাকা-কক্সবাজার রিটার্ন) | ১,২০০-১,৮০০ |
| আবাসন (২ রাত) | ১,৬০০-৩,০০০ |
| খাবার (৩ দিন) | ৯০০-১,৫০০ |
| স্থানীয় পরিবহন | ৪০০-৭০০ |
| কার্যক্রম ও প্রবেশমূল্য | ৩০০-৬০০ |
| বিবিধ | ৩০০-৫০০ |
| মোট | ৪,৭০০-৮,১০০ |
মিড-রেঞ্জ ট্রিপ (মাথাপিছু)
| আইটেম | খরচ (টাকা) |
|---|---|
| ট্রান্সপোর্ট (এসি বাস/ফ্লাইট) | ২,৫০০-৮,০০০ |
| আবাসন (২ রাত) | ৫,০০০-১০,০০০ |
| খাবার (৩ দিন) | ২,৪০০-৩,৬০০ |
| স্থানীয় পরিবহন (সিএনজি, গাড়ি ভাড়া) | ১,০০০-১,৮০০ |
| কার্যক্রম | ১,০০০-২,০০০ |
| কেনাকাটা ও বিবিধ | ৮০০-১,৫০০ |
| মোট | ১২,৭০০-২৬,৯০০ |
সেখানে যাওয়া: পরিবহন অপশন
বাসে (সবচেয়ে সাধারণ)
একাধিক কোম্পানি ঢাকা-কক্সবাজার রুট চালায়। যাত্রা সময়: ৮-১০ ঘণ্টা।
- নন-এসি বাস: ৬০০-৯০০ টাকা। বেসিক, ঘন ঘন থামে, ভিড় হয়। শুধু যদি আপনি সিরিয়াস বাজেট-সীমাবদ্ধ হন।
- এসি বাস: ১,২০০-১,৮০০ টাকা। আরামদায়ক সিট, এসি কাজ করে (সাধারণত), কম থামে। বেশিরভাগ মানুষ এটাই নেয়।
- লাক্সারি কোচ: ২,০০০-২,৫০০ টাকা। হানিফ, গ্রীন লাইন, অন্যান্য। ভালো সিট, পরিষ্কার, বেশি নির্ভরযোগ্য।
প্রো টিপস: রাতের বাস বুক করুন (রাত ১০-১১টা ছাড়ে, সকাল ৬-৮টা পৌঁছায়)। আপনি একটা হোটেল রাত বাঁচান আর দিনের আলো ভ্রমণে নষ্ট করেন না।
ট্রেনে
কক্সবাজারে এখন রেল সংযোগ আছে! ২০২৪ সালে খোলা।
ঢাকা থেকে যাত্রা সময়: ~১০-১২ ঘণ্টা। ভালো বার্থ পেলে বাসের চেয়ে বেশি আরামদায়ক।
- শোভন (ইকোনমি): ৩০০-৫০০ টাকা
- এসি চেয়ার: ৭০০-৯০০ টাকা
- এসি বার্থ: ১,২০০-১,৬০০ টাকা
বিমানে
কক্সবাজার এয়ারপোর্টে ঢাকা, চট্টগ্রাম, আর সিলেট থেকে ফ্লাইট আছে।
ঢাকা থেকে ফ্লাইট সময়: ৫০ মিনিট।
খরচ: একদিকে ৪,০০০-৮,০০০ টাকা (সিজন আর বুকিং সময় অনুযায়ী পরিবর্তিত)।
জরুরি টিপস: যেগুলো আমি কঠিন উপায়ে শিখেছি
১. তাড়াতাড়ি আবাসন বুক করুন (পিক সিজন)
নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি পাগলামি। হোটেল ভরে যায়। দাম আকাশ ছোঁয়। মান অপশন অদৃশ্য হয়।
অন্তত ২-৩ সপ্তাহ আগে বুক করুন। বড় ছুটির দিনে (ঈদ, পূজা, নববর্ষ), এক মাস আগে বুক করুন।
২. দরদাম করুন। সবসময়।
নির্ধারিত দামের হোটেল আর চেইন রেস্তোরাঁ ছাড়া, সবকিছু আলোচনাযোগ্য। সিএনজি, সৈকত কার্যক্রম, বাজার কেনাকাটা – চাওয়া দামের ৫০-৬০% দিয়ে শুরু করুন।
৩. রোদ থেকে সুরক্ষা আপোষহীন
এখানকার রোদ ভয়াবহ। আমি আমার প্রথম ভিজিটে সৈকতে মাত্র ৩ ঘণ্টা থেকে বেদনাদায়ক সানবার্ন পেয়েছিলাম।
নিয়ে আসুন: সানস্ক্রিন (SPF 50+), সানগ্লাস, টুপি, সৈকতে হাঁটার জন্য হালকা লম্বা হাতার শার্ট। প্রতি ২ ঘণ্টায় সানস্ক্রিন আবার লাগান।
৪. সাঁতারের নিরাপত্তা
বঙ্গোপসাগরে শক্তিশালী স্রোত থাকতে পারে। প্রতি বছর, ডুবে যাওয়ার ঘটনা ঘটে।
নিয়ম: একা সাঁতার কাটবেন না। অগভীর এলাকায় থাকুন। লাইফগার্ড থাকলে, শুধু চিহ্নিত জোনে সাঁতার কাটুন। রুক্ষ সমুদ্রে সাঁতার এড়িয়ে চলুন।
৫. নগদ টাকা রাজা
অনেক জায়গা কার্ড গ্রহণ করে না। এটিএম আছে কিন্তু পিক সিজনে নগদ শেষ হয়ে যেতে পারে।
ছোট মূল্যের নোটে পর্যাপ্ত নগদ নিয়ে আসুন।
৬. সপ্তাহান্তের ভিড়
শুক্র-শনিবার সৈকত ঢাকা আর চট্টগ্রাম থেকে স্থানীয় ট্যুরিস্টে ভরে যায়।
সম্ভব হলে, রবি-বৃহস্পতিবার ভিজিট করুন। একই দাম (সাধারণত), কম মানুষ, ভালো সৈকত অভিজ্ঞতা।
কি করবেন না: সাধারণ ভুল
১. শুধু মূল লাবনী এলাকায় থাকা: এটা সবচেয়ে ভিড় আর দামি অংশ। অন্য সৈকত ঘুরুন।
২. শুধু সৈকতের রেস্তোরাঁয় খাওয়া: ট্যুরিস্ট ফাঁদ। অতিরিক্ত দামি, মাঝারি মান। একটা রাস্তা ভেতরে যান।
৩. অনেক দূরে সাঁতার কাটা: বিপজ্জনক স্রোত। তীরের কাছে থাকুন।
৪. বর্ষায় যাওয়া: আপনি যদি রুক্ষ সমুদ্র আর বৃষ্টি পছন্দ না করেন, এপ্রিল-সেপ্টেম্বর এড়িয়ে যান।
৫. দরদাম না করা: আপনি সবকিছুর জন্য বেশি দাম দেবেন। সম্মানের সাথে কিন্তু দৃঢ়ভাবে আলোচনা করুন।
৬. ইনানী এড়িয়ে যাওয়া: সম্পূর্ণ কক্সবাজার এলাকার সেরা সৈকত। মিস করবেন না।
চূড়ান্ত চিন্তা: কক্সবাজার কি মূল্যবান?
এখানে আমার সৎ মতামত: আপনি যদি বালি, মালদ্বীপ, বা থাইল্যান্ডের দ্বীপের মতো জায়গায় গিয়ে থাকেন তবে কক্সবাজার আপনার মন উড়িয়ে দেবে না। এটা সেই লেভেলের ট্রপিক্যাল প্যারাডাইস না।
কিন্তু।
এটা বিশ্বের দীর্ঘতম প্রাকৃতিক সমুদ্র সৈকত। এটা সহজলভ্য। এটা সাশ্রয়ী। আর যদি আপনি এটা ঠিকভাবে করেন – কম ভিড়ের এলাকায় থাকুন, সঠিক মৌসুমে যান, স্থানীয় জায়গায় খান, মূল সৈকতের বাইরে ঘুরুন – এটা সত্যিই চমৎকার।
আমার সপ্তম ভিজিট প্রথমের চেয়ে ভালো ছিল কারণ আমি জানতাম কি আশা করতে হবে আর কিভাবে এটা ঠিকভাবে অভিজ্ঞতা করতে হবে। এই গাইড সেই জন্যই – যাতে আপনার প্রথম ভিজিট আমার সপ্তম যেমন ছিল তেমন হতে পারে।
আপনার সানস্ক্রিন প্যাক করুন, বিশৃঙ্খলা থেকে দূরে একটা ভালো হোটেল বুক করুন, অন্তত একবার ইনানীতে যান, তাজা সামুদ্রিক খাবার খান, সূর্যোদয়ের জন্য ঘুম থেকে উঠুন, আর শুধু উপভোগ করুন যে আপনি বিশ্বের দীর্ঘতম সৈকতে আছেন।
এটা নিখুঁত হবে না। কিছু জিনিস আপনাকে বিরক্ত করবে। কিন্তু আপনি ভালো সময় কাটাবেন।
আর সেটাই তো মূল কথা?
আরো কক্সবাজার তথ্য আর আবাসন বুকিংয়ের জন্য, আমাদের কক্সবাজার জেলা পেজ দেখুন। অন্যান্য বাংলাদেশ ভ্রমণ গাইডের জন্য, আমাদের ট্রাভেল ব্লগ দেখুন।








